নারী জঙ্গিবাদ ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

জঙ্গি তৎপরতায় নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, আনসার আল-ইসলামসহ জঙ্গি গ্রুপগুলোতে আত্মঘাতী নারী জঙ্গিদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আবার নারী হওয়ার কারণে অনেক সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের কম সন্দেহ করেন। এই সুযোগকে জঙ্গিরা কাজে লাগাচ্ছে। তাদের মধ্যে অনেকেই জঙ্গি স্বামীর হাত ধরে সংগঠনের সদস্য হচ্ছে। তারা ইসলামের নামে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত করছে। উগ্র জঙ্গিরা নানাভাবে নারীদের টার্গেট করে জঙ্গিবাদের সদস্য করছে।

পুলিশ ও র‌্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ২০১৬ সাল থেকে বিভিন্ন সময় রাজধানীতে অনেক নারী জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরপরও নারী জঙ্গি সদস্য সংখ্যা বেড়েই চলেছে বলে মন্তব্য করেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও অপরাধ নিয়ে গবেষণা করছেন এমন ব্যক্তিদের মতে, নারী জঙ্গিদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে তাদের আইনের আওতায় আনলে নারী জঙ্গিবাদ ঝুঁকি কমবে।

জানা গেছে, নারীদের বিষয়ে অনেক পুলিশের এখনও দুর্বল ধ্যান-ধারণা থাকায় উগ্র জঙ্গিরা নারীদের টার্গেট হিসেবে বেছে নিয়েছে বলে বিভিন্ন গবেষণায় ওঠে আসছে। এ ছাড়াও পুরুষ উগ্রবাদীদের অনেক তথ্য উপাত্য পুলিশের কাছে রয়েছে। তার তুলনায় নারী উগ্রবাদীদের সম্পর্কে তথ্য উপাত্য নেই বললেই চলে বা ধারণা করা হয়। সেই সুযোগ উগ্রবাদীরা গ্রহণ করছে। উগ্রবাদীদের এই কৌশল অঙ্কুরে বিনষ্ট না করা গেলে নতুন ধরনের উগ্রবাদী ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। যা বাংলাদেশ অভ্যান্তরীণ বা নিরাপত্তার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিতে পারে।

এই সম্পর্কে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এডিশনাল ডিআইজি (ইন্টেলিজেন্স) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, জঙ্গিবাদের মূল উৎপাটনের পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যে পুলিশ শীর্ষ ৬ নারী জঙ্গিসহ প্রায় ২১ জনের বেশি নারী জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে। জঙ্গিবাদ দমনে তাদের অভিযান ও গোয়েন্দা কার্যক্রম অব্যাহত আছে।

একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার মতে, দেশের বিভিন্ন জেলা ও গ্রামগঞ্জের কম শিক্ষিত ও দরিদ্র পরিবারকেন্দ্রীক নারীরা নানাভাবে প্রভাবিত হয়ে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছে। অনেকই সহজ সরল নারীদের প্রথমে ধর্মের কথা বলে কাছে টেনে নেয়। এরপর তারা কৌশলে আস্তে আস্তে নারীদের জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করে। আবার অনেকের স্বামী জঙ্গি হলে স্বাভাবিক কারণে তার স্ত্রীসহ পরিবারের সন্তানরা নিজেদের অজান্তে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছে।

পুলিশ সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ২০১৬ সালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাকিরা নামে এক নারী উগ্রবাদীকে গ্রেফতার করেছে। সে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন জেএমবি চট্টগ্রাম শাখায় কাজ করত। তার স্বামী রাশিদুর রহমান। নব্য জেএমবির সদস্য সংগ্রহে কাজ করত। সে তার স্ত্রী ও পরিবারের অন্য সদস্যদের জঙ্গিবাদী মতাদর্র্শে দিক্ষিত করেছে।

২০১৬ সালে ৮ মে পুলিশ বগুড়া থেকে মাসুদা আক্তার নামে এক নারী উগ্রবাদীকে গ্রেফতার করেছে। সে চট্টগ্রাম জেএমবির কমান্ডার রাইসুল ইসলাম খান ওরফে ফার্দিনের স্ত্রী। ২৪ জুলাই ২০১৬ সালে সিরাজগঞ্জ থেকে হাবিবা আক্তার মিশু নামে এক নারী জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে। সে রাশিদুল ইসলাম ওরফে বাবলু ওরফে মতিয়ারের বোন। ২০১৬ সালের ৮ অক্টোবর রাজধানীর আজিমপুর থেকে ফাতেমা ওরফে খাদিজা নামে এক নারী উগ্রবাদীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে জেএমবি নেতা তানভির কাদেরী ওরফে আবদুল করিমের স্ত্রী। জঙ্গিদের গ্রেফতারের সময় নারী জঙ্গিরা পুলিশের চোখে মরিচের গুড়া নিক্ষেপ ও চাপাতি দিয়ে পুলিশকে আঘাত করার চেষ্টা করেছে। তারপর পুলিশ ওই নারী জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে।

নারী জঙ্গি আফ্রিন ওরফে প্রিয়তা গুলশান হামলার সম্বনয়ক নুরুল ইসলাম মারজানের স্ত্রী। নারী উগ্রবাদী শিলা আফ্রিন নব্য জেএমবির নেতা বশিরুজ্জামান ওরফে চকলেটের ঘনিষ্ঠ। তার স্ত্রী জুনায়েরা ওরফে পিংকী। সে অবসরপ্রাপ্ত মেজর মুরাদ ওরফে জাহিদুল ইসলাম এবং তাহরির কাদেরীর ওরফে আবির ওরফে অনিক ওরফে রাশেল-এর মেয়ে। ২০১৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর জেবুন্নাহার শিলাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করেছে। সে অবসর প্রাপ্ত মেজর মুরাদ ওরফে জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী। তৃষা ওরফে তৃষণা জঙ্গি মুসা ওরফে মইনুদ্দিন ওরফে মহিউদ্দিনের স্ত্রী। পুলিশের বিভিন্ন অভিযানে এই সব নারী জঙ্গিরা গ্রেফতার হয়েছে। এর মধ্যে জঙ্গি আস্তানায় গোলাগুলি ও আস্তানা ঘেরাও করে তাদের গ্রেফতার করা হয়। নারী জঙ্গিরা শিশুদের অনেক সময় ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে পুলিশের ওপর হামলা চালানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু পুলিশ নানা কৌশলে নারী জঙ্গিকে আটক করেছে। রাজধানীর উত্তরা, আজিমপুর, সিলেটসহ ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় জঙ্গিবিরোধী অভিযানে অনেক জঙ্গি নিহত হয়েছে। তার মধ্যে নারী জঙ্গিও রয়েছে। এরপরও নারী জঙ্গির কার্যক্রম বেড়েই চলেছে বলে বিভিন্ন গবেষণা থেকে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।